খুলনা, বাংলাদেশ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  চুয়াডাঙ্গায় ট্রাকের চাপায় ইজিবাইকের চালকসহ নিহত ৩
  চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত : খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
  খুলনা নগরীর ওয়েস্টার্ন ইন হোটেল থেকে নারীর লাশ উদ্ধার

টানা বৃষ্টিতে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ক্রমেই পানি বৃদ্ধিতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, জলাশয় ও সাদা মাছের ঘের। বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। রান্না ঘরে পানি উঠায় অনেক পরিবারের রান্না খাওয়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেকেই।

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে না পারা, নদী-খাল খনন প্রকল্পে অনিয়ম, নদী-খালের প্রশস্ততা কমিয়ে ফেলা, তলদেশ খনন না করে পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখানো, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ও সরকারি খাল দখল করে মৎস্য ঘের গড়ে তোলা, অবৈধভাবে খালে দেওয়া নেট-পাটা দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করাসহ পরিবেশ বির্পয়ের কারণে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। ক্রমেই পানি বৃদ্ধির কারণে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়।

শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকালে শহরের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতল চত্বর। ভেলায় চড়ে স্কুল কলেজে যেতে হচ্ছে প্লাবিত এলাকার শিক্ষার্থীদের।

পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা আব্দুর রহিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও পৌর সভার কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়মের খেসারত দিতে হচ্ছে সাতক্ষীরাবাসীকে। কোটি কোটি টাকার নদী খনন প্রকল্পে অনিয়মের কারণে নদী ও খাল খননের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। খননের নামে নদী-খালের প্রশস্ততা কমিয়ে ফেলা হয়। তলদেশ খনন না করে পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখানো হয়েছে। ফলে স্থভাগের পানি নদীতে যায় না। উপরন্ত নদীর পানি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন । যার ফল ভোগ করছে পৌরসভার নিম্মাঞ্চলে বসবাসকারি সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বছরের চার থেকে ছয় মাস জলাবদ্ধতা থাকে। এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পৌরসভার মধ্যে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ও সরকারি খালগুলো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত মৎস্য ঘের। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে থাকে মাসের পর মাস।

ইটাগাছা আয়েনউদ্দীন মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার ফারুক হোসেন জানান, তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। অনেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া বাসায় দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুততম সময়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

পৌর এলাকার সাবিনা বেগম জানান, একদিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্ত পানি না খেয়ে থাকা যায় না। এখন কোথাও খাওয়ার পানি নেই। ভেলায় করে দূর দূরান্ত থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

একই এলাকার আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন করার মতো উচু জায়গা নেই। সব বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকা কম বেশি প্লাবিত হলেও এবারের চিত্রটি সম্পূর্ন ব্যতিক্রম।

জলাবদ্ধতা এলাকায় ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাতে কথা বলে সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের আমীর জাহিদুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্ত অপরিকল্পিত খননের কারণে তা যায় পানিতে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ সব পানিতে ডুবে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, গোয়াল ঘরে পানি ওঠায় গরু ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ। সেই সাথে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও অপরিকল্পিত নদী খননই এর জন্য দায়ী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শনে যেয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে দফায় দফায় কথা বলেছি। তারা পানি নিষ্কাশনে দ্রত পদক্ষেপ নিচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!